ম্যারাডোনার যে দুই গোল আজও ফুটবলের সেরা

ম্যারাডোনার যে দুই গোল আজও ফুটবলের সেরা
ডিয়েগো ম্যারাডোনা
শেয়ার করুন

ডিয়েগো ম্যারাডোনা; নামটার সাথে মিশে আছে ভালোবাসা, আবেগ আর ফুটবলের একরাশ হতবাক করা গল্প। হ্যাঁ, তিনিই যে ফুটবল ঈশ্বর। তিনিই যে ফুটবলকে চিনিয়েছেন নতুন করে।

অল্প কয়েক মিনিটের ব্যাবধানে দুটি ঐতিহাসিক গোল; এতটাই ঐতিহাসিক যে গোল দুটির আলাদা আলাদা নামও রয়েছে। গোল দুটি করা হয়েছিল ফুটবল ইতিহাসের সবথেকে ফেমাস হাত এবং ফেমাস পা দিয়ে।

এটা কি কারো পক্ষে কখনো সম্ভব যে ফুটবল ইতিহাসের সবথেকে পরিচিত দুটি গোল করবে একই ম্যাচে ? তাও আবার ৫ মিনিটের ব্যাবধানে ? শুধুমাত্র দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার পক্ষেই হয়তোবা সম্ভব ছিল। গোল দুটি বিশ্বমঞ্চে এতটাই পরিচিত যে গোল দুটির আলাদা আলাদা নাম পর্যন্ত রয়েছে : লা মানো দে দিওস এবং এল গোল দেল সিগলো (হ্যান্ড অফ গড & গোল অফ দি সেঞ্চুরি)। ব্যস, আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়েনা। তবুও চলুন জেনে নেয়া যাক গোল দুটির খানিক বিস্তারিত কথা-

লা মানো দে দিওস

এই গোলটি হচ্ছে যে কোনো ধরণের স্পোর্টস ভ্যালুর বিপক্ষে। যে কোনো স্পোর্টসের প্রথম ভ্যালুই হচ্ছে সততা আর এই গোলটি হচ্ছে সব ধরণের মোরালিটি এবং সততার বিপক্ষে। ফুটবল খেলায় হাতের ব্যবহার নিষিদ্ধ সেটি সবাই জানে , আর সেই হাত দিয়ে গোল করেই ম্যারাডোনা চলে যান ইতিহাসের পাতায়। গোলের পর তার অভিনয় ছিল আরও দৃষ্টিকটু। ম্যারাডোনা তার দলের সতীর্থদের আহবান করতে থাকেন যে তারা যেন গোলের জন্য উল্লাস করে তাকে এসে জড়িয়ে ধরে। রেফারি যেন কোনো ভাবেই বুঝতে না পারে যে এটি হ্যান্ড বল ছিল।

দিয়েগো পরবর্তীতে এই গোলটিকে এবং তার এই আচরণকে জাস্টিফাই করবে ঈশ্বরকে জড়িয়ে। তার মতে ঈশ্বরই চেয়েছেন এইভাবে প্রতিশোধ নিতে সেই ইংরেজদের বিপক্ষে যারা শক্তির মাধ্যমে দখল করে রেখেছে মালভিনা দ্বিপ (ফলকল্যান্ড – সেই ম্যাচের ৪ বছর পূর্বেই আর্জেটিনা এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হয়েছিল )

ফুটবলের জিনিয়াস ম্যারাডোনা

এল গোল দেল সিগলো

হাতের গোলে তোমরা খুশি না ? ওকে ! ঠিক আছে ! তাহলে এখন দেখো আমি পা দিয়ে কি করতে পারি? ৫ মিনিট পূর্বে করা হাতের সেই গোলটির জন্য ক্ষমা চাইতেই হয়তো তিনি তার ঐতিহাসিক সেই ড্যান্স শুরু করেন স্তাদিও আজটেকার (ম্যাচ অফ দি সেঞ্চুরিও কিন্তু এই মাঠেই হয়েছিল) মিডফিল্ডে। একের পর এক ইংলিশ দের তিনি যখন ড্রিবলিং করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সেটি এতটাই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিলো যে সেই মুহূর্তে সেই ম্যাচের ধারাভাষ্যকার ভিক্টর হুগো মোরালেস (যাকে ইতিহাসের সেরা ধারা ভাষ্যকার বলা হয়ে থাকে) যা দেখছিলেন তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলেননা। তিনি শুধু বলে যাচ্ছিলেন টা -টা -টা -টা -টা -টা -টা যার কোনো অর্থ নেই। কারণ ম্যারাডোনা সেই মুহূর্তে সমস্ত বিশ্ববাসীর সামনে যা করেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মত কোনো ভাষাও আসলে নেই। সব ইমোশন কেই যে ভাষায় প্রকাশ করতে হবে এমন কোনো কথাও নেই। কিছু কিছু ইমোশন এতটাই শক্তিশালী হয়ে থাকে যে তা ভাষাহীন থাকাটাই শ্রেয়। ম্যারাডোনার সেই গোলটি ঠিক তেমনটাই ছিল। ফুটবলের জিনিয়াস ম্যারাডোনা কে সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছে পৃথিবীর মানুষ কে অবাক করার জন্য।

ম্যারাডোনা সেই গোলটি করার সময় ১০ সেকেন্ডে ৬২ মিটার দূরত্ব দৌড়িয়েছেন। ১২ বার বল টাচ করেছেন (প্রতিবারই তার ম্যাজিক্যাল বাম পা দিয়ে টাচ করেছেন) এবং ৬ জন ইংরেজ খেলোয়াড় দের ড্রিবলিং করেছেন যাদের কেউ তাকে ফাউল পর্যন্ত করতে পারেনি (ফুটবল তাদের আজীবন ধন্যবাদ দিয়ে যাবে না পারবার জন্য)।

সেই ম্যাচের এই দুটি মুহূর্তই ছিল ম্যারাডোনার সমস্ত ক্যারিয়ার, সমস্ত ব্যাক্তিত্ব। সে একই সাথে দিয়েগো এবং একই সাথে ম্যারাডোনা। সে একই সাথে ডেভিল এবং একই সাথে এঞ্জেল। আমরা যারা সাধারণ মানুষ রয়েছি আমরাই বা কি ? আমরা সবাইতো এই ডেভিল আর এঞ্জেলরই সংমিশ্রণ। আর এই জন্যই হয়তো ম্যারাডোনা প্রবেশ করতে পেরেছিলেন প্রতিটি ”সাধারণ” মানুষের হৃদয়ে, কারণ তিনিও ছিলেন একজন সাধারণ মানুষই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।