জীবনে একবার হলেও যেসব বই পড়া উচিত (পর্ব ১)
উপন্যাস হোক বা ইতিহাস নির্ভর বই—মোটা বই দেখলেই আমরা ঘাবড়ে যাই। বইগুলো সামলানো বা সেগুলো পড়ার ক্ষেত্রে অনেকের অনীহা দেখা যায়। আসলে অনীহার কিছু নেই। বিশেষত ই-রিডারের যুগে হাজার হাজার-শব্দকে পকেটে নিয়ে চলা কোন সমস্যা নয়।
এখানে সাহিত্যের কয়েকটি দুর্দান্ত উপন্যাসের নাম দেয়া হল যা সবার তালিকায় যুক্ত করা উচিত। আরও ভালোভাবে যদি বলি, এগুলো না পড়লে জীবনে অনেক কিছুই মিস করবেন। আজ রইলো প্রথম পর্ব—
১. হারম্যান মেলভিলের ‘মোবি-ডিক (দ্য হোয়েল)’
তালিকাটি শুরু করছি ছোট একটি ৭২০ পৃষ্ঠার বই দিয়ে, এটি আমেরিকান লেখক মেলভিলের এক অনবদ্য সৃষ্টি। মোবি-ডিকের গল্প তার কেন্দ্রীয় চরিত্র আহাবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। আহাব হলেন, হোয়েলিং শিপ ‘পিকোড’এর ক্যাপ্টেন। তিনি একটি বিশালাকার হোয়াইট স্পার্ম তিমির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কারণ এই তিমি তার হাঁটুর নীচ থেকে পায়ের অংশ নিয়ে গেছে। এজন্য তিনি পাগলের মতো সাগরে সেই তিমির অনুসন্ধান করে চলেন।
গল্পের বর্ণনাকারী হলেন ইসমায়েল নামে এক নাবিক। এবং এই সাহিত্যে অন্যতম জনপ্রিয় প্রথম লাইনটি হল: “আমাকে ইসমায়েল বলে ডাকুন।” বইটি অদ্ভুত, পাণ্ডিত্যপূর্ণ, মজার, গভীর অর্থবহ এবং আমেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস হিসাবে বিবেচিত।
২. হানিয়া ইয়ানাগিহারার ‘আ লিটল লাইফ’
উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে চার বন্ধুর জীবনের গল্পকে ঘিরে। কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে তারা অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে নিউ ইয়র্ক সিটিতে যায়। জেবি হলেন শিল্পী, উইলিয়াম একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেতা এবং ম্যালকম একজন স্থপতি। তবে জুড – নিজেকে ক্ষতি করতে চাওয়া একজন আইনজীবী। যার রয়েছে একটি রহস্যময় অতীত- বইটি জুডের এই গল্পেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।
গল্পটি যতোই এগিয়ে যায়. জুডের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ততোই প্রকাশ পেতে থাকে। গল্পটি মারাত্মক কষ্টের এবং মন খারাপ করে দেয়ার মতো। যেখানে কয়েক দশকের ঘটনা বলা হয়েছে এবং বইটির শেষ পৃষ্ঠাগুলো পড়ার সময় আপনার চোখ বেয়ে কান্না আসবেই।
ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য এই মনোনীত হয়েছিল।
৩. জর্জ এলিয়টের ‘মিডলমার্চ’
বইটি এলিয়টের মাস্টারপিস হিসাবে বিবেচিত, উপন্যাসটি’ মিডলমার্চ’ নামে একটি কাল্পনিক শহরের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জীবন নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে। ভদ্র সম্প্রদায়ের ভূমি মালিক থেকে শুরু করে খামার শ্রমিক বা কারখানার শ্রমিক পর্যন্ত সবার কথাই জায়গা পেয়েছে এই বইটিতে। তবে মূল ফোকাস ছিল দুটি চরিত্রকে ঘিরে, একজন হলেন জেদি এবং দৃঢ়-ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন ডোরোথিয়া ব্রুক এবং অপরজন আদর্শবাদী টারটিয়াস লিডগেট। তারা দুজনেই বিপর্যস্ত বৈবাহিক জীবনের শিকার ছিলেন।
বইটি ১৯শতকে লেখা হলেও এতে রয়েছে অবিশ্বাস্যরকম আধুনিকতা বোধ। কারণ বইটিতে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সীমাবদ্ধতা এবং এই ত্রুটিপূর্ণ দুনিয়ায় একজন নৈতিক ব্যক্তি হয়ে ওঠার পথে নানা সংগ্রামের মতো বড় থিমগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৪. চার্লস ডিকেন্সের ‘ব্লিক হাউস’
‘ব্লিক হাউস’ হল ডিকেন্সের দীর্ঘতম উপন্যাস। বইটি জার্নডাইস পরিবারের গল্পকে ঘিরে লেখা হয়েছে। যাদের আশা উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদ পাওয়া। কিন্তু সেই স্বপ্ন বার বার ব্যর্থতার মুখে পড়ে। কারণ জার্নডাইস অ্যান্ড জার্নডাইস মামলাটি দীর্ঘকাল ধরে আইনি মারপ্যাঁচের মধ্যে চলছে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
মামলাটি এতোটাই জটিল হয়ে পড়েছে যে এখন বেঁচে থাকা উত্তরাধিকারদের কেউ এই মামলার কিছু বুঝতে পারে না। ডিকেন্স এই বইটিতে ‘কোর্ট অব চ্যান্সেরি’ নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন, এই আদালতে একটি মামলা কয়েক দশক ধরে চলতে পারে। উপন্যাসটিতে রয়েছে অসংখ্য চরিত্র এবং বেশ কয়েকটি পার্শ্ব কাহিনিও রয়েছে।
৫. মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের ‘ডন কিয়োটে’
ডন কিয়োটে একজন মধ্যবয়সী স্প্যানিশ ভদ্রলোক, যিনি বীরদের অনেক রোম্যান্স গাঁথা পড়েন। সেই থেকে তিনি তলোয়ার তুলে একজন ভবঘুরে বীর হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের পুরানো ঘোড়া এবং বাস্তববাদী মানসিকতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী অভিযাত্রার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। ডন কিয়োটের “বীরত্বপূর্ণ” কাজের মধ্যে রয়েছে উইন্ডমিলের সাথে লড়াই করার চেষ্টা করা, যেগুলোকে তিনি দৈত্য ভেবে ভুল করেছিলেন এমনকি তিনি এক পাল ভেড়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন।
এই প্রভাবশালী সাহিত্যকে প্রায়শই প্রথম আধুনিক উপন্যাস হিসাবে বিবেচনা করা হয়।