জীবনে একবার হলেও যেসব বই পড়া উচিত (পর্ব ২)

জীবনে একবার হলেও যেসব বই পড়া উচিত (পর্ব ২)
অনেক পুরান বইতেও অবিশ্বাস্যরকম আধুনিকতা বোধ ফুটে ওঠে।
শেয়ার করুন

উপন্যাস হোক বা ইতিহাস নির্ভর বই—মোটা বই দেখলেই আমরা ঘাবড়ে যাই। বইগুলো সামলানো বা সেগুলো পড়ার ক্ষেত্রে অনেকের অনীহা দেখা যায়। আসলে অনীহার কিছু নেই। বিশেষত ই-রিডারের যুগে হাজার হাজার-শব্দকে পকেটে নিয়ে চলা কোন সমস্যা নয়।

এখানে সাহিত্যের কয়েকটি দুর্দান্ত উপন্যাসের নাম দেয়া হল যা সবার তালিকায় যুক্ত করা উচিত। আরও ভালোভাবে যদি বলি, এগুলো না পড়লে জীবনে অনেক কিছুই মিস করবেন। প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন। পড়া হয়ে গেলে শুরু করুন দ্বিতীয়/শেষ পর্ব—

৬. ডেভিড ফস্টার ওয়ালেসের ‘ইনফিনিট জেস্ট’

ডেভিড ফস্টার ওয়ালেসের এই মহাকাব্যটি অদূর ভবিষ্যতের ডিস্টোপিয়াকে ঘিরে লেখা হয়েছে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো এই তিন দেশ উত্তর আমেরিকান জাতিগত সংস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়। ডিস্টোপিয়া হল সাহিত্যের একটি শাখা। যেখানে এমন একটি কাল্পনিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো নিয়ে কথা বলা হয় যেখানে কেবল দুর্ভোগ আর অবিচারের রাজত্ব।

মূল গল্পটি শুরু হয় একটি টেনিস একাডেমি এবং মাদকাসক্ত নিরাময় সংস্থাকে কেন্দ্র করে। মূল প্লট লাইনটি হল “ইনফিনিট জেস্ট” শিরোনামের একটি চলচ্চিত্র দেখার আকাঙ্ক্ষা। যা দর্শকদের অনুভূতিহীন শিথিল অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। বইটি, এর পরীক্ষামূলক কাঠামোর জন্য বেশ জনপ্রিয়: এখানে ৩৮৮টি এন্ডনোটস রয়েছে যার মধ্যে কয়েকটির নিজস্ব পাদটীকা রয়েছে।

৭. লিও টলস্টয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’

টলস্টয়ের মহাকাব্যটি রাশিয়ার নেপোলিয়ন যুগকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্র এবং হোম ফ্রন্টের মধ্যে তিনটি কুখ্যাত চরিত্রকে ঘিরে গল্প এগিয়ে যায়। চরিত্র তিনটি হল: পেরে বেজুখভ, একজন কাউন্টের অবৈধ পুত্র যিনি নিজের উত্তরাধিকারের জন্য লড়াই করছেন; প্রিন্স আন্দ্রেই বলকনস্কি, যিনি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তাঁর পরিবারকে ছেড়ে চলে এসেছেন; এবং নাতাশা রোস্তভ, একজন অভিজাত ব্যক্তির সুন্দরী অল্পবয়সী মেয়ে।

‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ বইয়ের ওজন!

টলস্টয় একইসাথে সেনাবাহিনী এবং অভিজাতদের উপর যুদ্ধের প্রভাব কেমন হয়, সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন। (যদি বইটিকে খুব দীর্ঘ বলে মনে হয় তবে আপনি বিবিসি অ্যাডাপটেশনের সাহায্য নিতে পারেন)

৮. স্টিফেন কিং এর ‘দ্য স্ট্যান্ড’

দ্য স্ট্যান্ড বইটি হল একটি পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপটিক হরর-ফ্যান্টাসি ঘরানার বই। যেখানে বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার বা জৈব যুদ্ধের জন্য বিভিন্ন অসুখ বিসুখের দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবাণু নিয়ে গবেষণা করার কথা বলা হয়। দুর্ঘটনাক্রমে সেই জীবাণুগুলো একদিন একটি সুরক্ষিত গবেষণাগার থেকে বের হয়ে যায়। এবং এই মহামারীতে বিশ্বের ৯৯ শতাংশেরও বেশি মানুষ মারা যায়।

বইটির দুটি বিকল্প সমাপ্তি রয়েছে। ১৯৭৮ সালে প্রথম প্রকাশিত ৮০০-পৃষ্ঠার মূল সংস্করণে সমাপ্তি ছিল এক রকম। সেই সময় প্রকাশকরা এর চাইতে বড় পাণ্ডুলিপি মুদ্রণ করতে পারতেন না। তবে ১৯৯১ সালের পরে, কিং-এর পূর্ণ, অপরিবর্তিত সংস্করণ প্রকাশ করা হয়, যা ভক্তদের মধ্যে আরও আশার সঞ্চার করে।

একটি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত যে, আপনি যে সংস্করণটি পড়েন না কেন, সেজন্য আপনাকে দীর্ঘ সময় সিটে বসে থাকতে হবে।

৯. বিক্রম শেঠের ‘এ সুটেবল বয়’

শেঠ-এর বিশাল উপন্যাসটি ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে, স্বাধীনতা-উত্তর, ভারতবর্ষ বিভাজনের পরের প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা হয়েছে। যেখানে চারটি একান্নবর্তী পরিবারের ১৮ মাসের গল্প তুলে ধরা হয়। গল্পের চরিত্র মিসেস রুপা মেহরার একমাত্র মেয়ে লতার জন্য একজন “উপযুক্ত পাত্র” খুঁজে পাওয়ার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে গল্প এগিয়ে যায়।

‘ইন সার্চ অব লস্ট টাইম’ বইকে ১৩টি ভলিউমে ভাগ করা হয়েছে

১০. মার্সেল প্রুস্টের ‘ইন সার্চ অব লস্ট টাইম’

প্রাউস্টের মহাকাব্য ‘আ লা রিচার্চে দু টেম্পস পারদু’ (মূল ফরাসী শিরোনাম) বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। যাকে ১৩টি ভলিউমে ভাগ করা হয়েছে। বইটির মোট শব্দ সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখের মতো। মূলত, এটি এখন পর্যন্ত দীর্ঘতম উপন্যাস হিসাবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে।

এই বইটির সারসংক্ষেপ দেয়ার চেষ্টা করাও হবে ভুল। তবে সংক্ষেপে বলতে গেলে বইটির গল্প লেখকের শৈশবের স্মৃতি এবং যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। লেখক তার পুরো গল্পে সব সময় উদ্বিগ্ন থাকেন এই ভেবে যে তার সময় প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে এবং এই পৃথিবীর আসলে কোনও অর্থ নেই।

এই বইটি পড়তে আপনাকে অনেক, অনেক বেশি সময় দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।