অন্য রাশিয়ার গল্প: যা দেখে মুগ্ধ বিশ্ব

অন্য রাশিয়ার গল্প: যা দেখে মুগ্ধ বিশ্ব
সেন্ট বাসিল'স ক্যাথেড্রাল
শেয়ার করুন

পুতিনের দেশ রাশিয়া মানেই যেন বিস্ময়! বিশেষ করে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য রাশিয়া যেনো এক স্বর্গের নাম। নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত রাশিয়ায় রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। রয়েছে চোখ জুড়ানো অসংখ্য মনোরম দৃশ্য। তাই তো সারাবছরই বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে লেগেই থাকে পর্যটকদের আনাগোনা।

জেনে নেয়া যাক রাশিয়ার কিছু অন্যতম দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্পর্কে-

দ্য মাদারল্যান্ড কল’স

রাশিয়ার বিখ্যাত স্টালিনগ্রাড যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত ভাস্কর্যই হল দ্য মাদারল্যান্ড কল’স। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েতদের বিজয় প্রতীক হিসেবেও গণ্য করা হয় এই ভাস্কর্যটিকে। ভাস্কর্যটি দেশপ্রেমের এক অনন্য প্রতীক। এটি এক যোদ্ধা মায়ের চিৎকাররত মুহূর্ত, যিনি মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য সন্তানদের আহ্বান জানাচ্ছেন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। আকাশে উত্তোলিত খোলা তলোয়ারটি দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষমতা ও দেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগেরই বহিঃপ্রকাশ।

ঐতিহাসিক এই ভাস্কর্যটির অবস্থান ভোলগাগ্রাদ শহরের কার্গান পর্বতের চূড়ায়। এটির নকশা করেছেন ভাস্কর ইয়েভগেনী ভুচেটিক এবং পুরো কাঠামোটি তৈরি করেন প্রকৌশলী নিকোলাই নিকিতিন। গ্রীক দেবী নাইকির মার্বেল মূর্তি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরিকৃত এই ভাস্কর্যটির মূল অংশের দৈর্ঘ্য ১৭০ ফুট এবং তলোয়ারটির দৈর্ঘ্য ১০৮ ফুট। ভাস্কর্যটির ভিতের ২০০টি ধাপ যুদ্ধের ২০০ দিনের কথা নির্দেশ করে থাকে। দ্যা মাদারল্যান্ড কল’স উন্মোচিত করা হয় ১৯৬৭ সালের ১৫ অক্টোবর। সেই বছরেই এটি বিশ্বের দীর্ঘতম ভাস্কর্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

দ্য মাদারল্যান্ড কল’স

হার্মিটেজ জাদুঘর

পৃথিবীর প্রাচীনতম জাদুঘরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে অবস্থিত হার্মিটেজ জাদুঘর। ক্যাথেরিন গ্রেটের হাত ধরে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৬৪ সালে। জনসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হল ১৮৫২ সালে। আয়তনে সুবিশাল এই জাদুঘরটিতে রয়েছে নানা প্রত্নতত্ত্ব ও অসংখ্য প্রাচীন শিল্পকর্ম। সবসময়ই ভ্রমণপিপাসু মানুষদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এই জাদুঘর। ২০১৭ সালে এখানে ঘুরতে আসা মোট দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪২ লাখ।

সেন্ট বাসিল’স ক্যাথেড্রাল

পর্যটকদের অন্যতম আরেকটি আকর্ষণের নাম মস্কোর রেড স্কোয়্যারে অবস্থিত সেন্ট বাসিল’স ক্যাথেড্রাল। এর আরেক নাম থিওটকস ক্যাথেড্রাল। রুশ সম্রাট জার ইভানের নির্দেশে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৫৬১ সালের ১২ জুলাই। পেঁয়াজ আকৃতির রঙ-বেরঙের গম্বুজ ও চোখ জুড়ানো নকশার জন্য খুব সহজেই দর্শকদের মন কেড়ে নিতে সক্ষম এই ক্যাথেড্রাল। ১৯৯০ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

পিটারহফ প্রাসাদ

পিটারহফ প্রাসাদ, অসংখ্য বাগান ও কয়েকটি বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটসহ ঘুরে দেখার মত আরো অনেক কিছুই আছে সেন্ট পিটারসবার্গের ছোট্ট একটি উপশহর, পিটারহফে। শুধুমাত্র চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যের জন্যই নয়, নানা ঐতিহাসিক কারণেও পিটারহফ প্রাসাদ থাকে পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল ১৭৩০ সালে। এটি তৈরিতে সময় লেগেছিল ২০ বছরের মতো।

মাউন্ট এলব্রুস

রুশ-তুরস্ক যুদ্ধ, গ্রেট নর্দান ওয়্যার ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মত তিনটি যুদ্ধে রাশিয়ানদের জয়ের প্রতীক হিসেবে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পিটারহফ প্রাসাদ। তাই তো সৌন্দর্যের পাশাপাশি রাশিয়ানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া পেতেও অনেকে ঘুরতে আসেন মনোরম পরিবেশবেষ্টিত পিটারহফ প্রাসাদে।

মাউন্ট এলব্রুস

ভ্রমণের পাশাপাশি যারা খানিকটা রোমাঞ্চপ্রিয়, তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকবে দক্ষিণ রাশিয়ার ককেশাস পর্বতমালার অন্তর্গত মাউন্ট এলব্রুস। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে সৃষ্টি হওয়া এই পর্বতটির উচ্চতা ১৮ হাজার ৫১০ ফুট। পর্বত জয়ের নেশা থেকে প্রতি বছরই অসংখ্য পর্যটক ভীড় জমান মাউন্ট এলব্রুসে। পাশাপাশি এখানে রয়েছে কেবল কারের মাধ্যমে পর্বতের ৩৮০০ মিটার পর্যন্ত উপরে যাওয়ার ব্যবস্থা। বরফে চাদরে মুড়ে থাকা আকাশছোঁয়া মাউন্ট এলব্রুস নিঃসন্দেহে আপনাকে দেবে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।